মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা 2025।আবেদন নিয়ম, নম্বর বণ্টন ও কাট মার্ক জানুন বিস্তারিত

বাংলাদেশে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অনেক তরুণ-তরুণীর। এই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ হলো মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেয় সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার আশায়।
তবে ২০২৫ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা 2025, আবেদন প্রক্রিয়া, কত নম্বর পেলে চান্স পাওয়া যায় — এসব প্রশ্ন অনেকের মনে রয়েছে।
এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সমস্ত তথ্য — আবেদন যোগ্যতা থেকে শুরু করে নম্বর বণ্টন, কাট মার্ক, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যন্ত।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা 2025

২০২৫ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু একাডেমিক ও জাতীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো —

একাডেমিক শর্ত

  • আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • প্রার্থীকে অবশ্যই ২০২৪ সালে এইচএসসি বা “এ” লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
  • ২০২২ সালের আগে এসএসসি বা “ও” লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে না।
  • এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে।
  • জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন — এই তিনটি বিষয় অবশ্যই থাকতে হবে।

GPA যোগ্যতা (২০২৫ সালের জন্য)

পরীক্ষান্যূনতম GPAমন্তব্য
এসএসসি৪.০০বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হতে হবে
এইচএসসি৪.০০জীববিজ্ঞানে কমপক্ষে GPA ৩.৫০ আবশ্যক
মোট GPA (এসএসসি + এইচএসসি)৯.০০এর নিচে আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আবেদন যোগ্যতা 2025

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুধুমাত্র অনলাইনে করতে হয়। সাধারণত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে আবেদন শুরু হয়। নিচে আবেদন প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে দেওয়া হলো —

আবেদন প্রক্রিয়া

  1. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইট www.dghs.gov.bd-এ যান।
  2. “MBBS Admission” অপশনে ক্লিক করুন।
  3. অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য, ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করুন।
  4. আবেদন সম্পন্ন করার পর ফি পরিশোধ করুন টেলিটক প্রি-পেইড সিমের মাধ্যমে।

আবেদন ফি

বিষয়পরিমাণপরিশোধ মাধ্যম
ভর্তি পরীক্ষার ফি১০০০ টাকাটেলিটক প্রি-পেইড সিম

🕒 স্মরণ রাখুন: সময়মতো আবেদন না করলে ফর্ম গ্রহণ করা হয় না, তাই শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা না করাই ভালো।

সরকারি মেডিকেলে চান্স পেতে কত নম্বর লাগে

বাংলাদেশে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির প্রতিযোগিতা সবচেয়ে কঠিন। প্রতি বছর প্রায় এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়, কিন্তু আসন থাকে মাত্র ৪,০০০–৪,৫০০টি।

👉 সাধারণত ৭৫ থেকে ৮৫ নম্বরের মধ্যে পেলে সরকারি মেডিকেলে চান্স পাওয়া সম্ভব
তবে এই নম্বর বছরে বছরে প্রশ্নের কঠিনতা ও শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স অনুযায়ী কিছুটা পরিবর্তিত হয়।

মেডিকেল এ কত পয়েন্ট লাগে?

ভর্তি নির্ধারণে শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষার ফল নয়, SSC ও HSC পরীক্ষার GPA পয়েন্টও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপাদানসর্বোচ্চ পয়েন্ট
এসএসসি GPA১৫
এইচএসসি GPA২৫
লিখিত ভর্তি পরীক্ষা১০০
মোট পয়েন্ট১৪০

অর্থাৎ, আপনি যদি লিখিত পরীক্ষায় ভালো করেন এবং GPA ভালো থাকে, তাহলে মেধাতালিকায় উপরে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোন কোন বিষয় পরীক্ষা হয়

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সাধারণত এইচএসসি সিলেবাস অনুযায়ী নেওয়া হয়। প্রশ্নগুলো বহুনির্বাচনী (MCQ) হয়। নিচে বিষয়ভিত্তিক নাম্বার বণ্টন দেওয়া হলো —

বিষয়নাম্বার
জীববিজ্ঞান৩০
রসায়ন২৫
পদার্থবিজ্ঞান২০
ইংরেজি১৫
সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক)১০
মোট১০০

🕒 পরীক্ষার সময়: ১ ঘণ্টা

  • প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর
  • প্রতিটি ভুল উত্তরে ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কাট মার্ক 2025

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার পাস নম্বর হলো ৪০।
অর্থাৎ, পরীক্ষায় ১০০ এর মধ্যে অন্তত ৪০ পেতে হবে পাস হিসেবে গণ্য হতে।
তবে মনে রাখবেন, শুধু পাস করলেই ভর্তি পাওয়া যায় না। মেধাতালিকা নির্ভর করে মোট প্রাপ্ত নম্বরের উপর, যার মধ্যে লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি GPA পয়েন্টও বিবেচনায় আসে।

মেডিকেলে মোট কত নম্বরের পরীক্ষা হয়

পুরো ভর্তি পরীক্ষা ১০০ নম্বরের হয়।
প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর, ভুল উত্তরে ০.২৫ নম্বর কাটা হয়।
🕐 পরীক্ষার সময় মাত্র ৬০ মিনিট, অর্থাৎ গড়ে প্রতি প্রশ্নে ৩৬ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়।
এজন্য সময় ব্যবস্থাপনা ও প্রশ্ন বাছাই দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভর্তি আবেদন ও পরীক্ষার সময় নিচের ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত রাখুনঃ

  • এসএসসি ও এইচএসসি (বা সমমান) সনদ ও মার্কশিট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
  • আবেদন ফি জমাদানের রসিদ (টেলিটক পেমেন্ট রসিদ)
  • অনলাইন আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির টিপস ✅

  1. বায়োলজিতে বিশেষ গুরুত্ব দিন, কারণ এটি সর্বাধিক নম্বর বহন করে।
  2. বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান করুন এবং সময় ধরে মক টেস্ট দিন।
  3. প্রতিদিন অন্তত ৩–৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে পড়াশোনা করুন।
  4. ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান অংশ অবহেলা করবেন না।
  5. পরীক্ষার আগের দিন যথেষ্ট বিশ্রাম নিন ও আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন।

FAQ (প্রশ্নোত্তর)

প্রশ্ন ১: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সর্বনিম্ন কত নম্বর পেতে হয়?
উত্তর: লিখিত পরীক্ষায় অন্তত ৪০ নাম্বার পেতে হবে পাস করার জন্য।

প্রশ্ন ২: মেডিকেল ভর্তি ফরম কবে থেকে পাওয়া যাবে?
উত্তর: সাধারণত জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনলাইন আবেদন শুরু হয়।

প্রশ্ন ৩: সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা কি আলাদা?
উত্তর: না, সরকারি ও বেসরকারি উভয় কলেজের জন্য একই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়।

উপসংহার

২০২৫ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া, কাট মার্ক এবং নাম্বার বণ্টন সবকিছুই ইতিমধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। সফল হতে চাইলে এখন থেকেই পরিকল্পিত প্রস্তুতি শুরু করা দরকার।
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে কঠোর পরিশ্রম ও সময়ানুবর্তিতা অত্যন্ত জরুরি।
আজ থেকেই পড়াশোনা শুরু করুন, মক টেস্ট দিন, এবং আত্মবিশ্বাস রাখুন — কারণ আপনার একাগ্রতাই আপনাকে মেডিকেল কলেজে পৌঁছে দিতে পারে।

Leave a Comment